বেঁচে থাকার জন্য
আমাদের নিয়মিত আহার করতে হয়। মানুষ শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিনই বিভিন্ন
দ্রব্য আহার করে থাকে। মুখের স্বাদের জন্য বা নিজের তৃপ্তির জন্য সাধারণত: একসাথে
দুটি বা কয়েক ধরণের আহারীয় দ্রব্য আমরা প্রায়ই খেয়ে থাকি।
সব আহারীয় দ্রব্যের
গুণাগুণ সমান হয় না, আর তাতে নানা রোগের সৃষ্টি হ য়ে থাকে। যদি আহারীয় দ্রব্যগুলোর
মধ্যে উপাদেয় সমতা থাকে তাহলে তা আমাদের শরীর জন্য দারুন উপকারী হয়ে থাকে আর যদি
খাদ্যাবস্তু গুলি যদি বিরূপ ধর্মাবলম্বী হয়ে থাকে তাহলে তা শরীরের জন্য অত্যন্ত
ক্ষতিকারক হয়ে থাকে। এবং এর থেকে নানা রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে এইজন্য আহারীয় দ্রব্য
যতই পুষ্টিকারক ও উপযোগী হোক না কেন বিরুপ প্রভাব যুক্ত খাবারগুলি কখনই একসাথে
গ্রহণ করা উচিত নয়। দীর্ঘায়ূ ও সুস্থ দেহ কামনাকারী ব্যক্তির উচিত খাবার সময় ভোজ্য
পদার্থের ক্ষতিকারক ও লাভদায়ক সংযোগের দিকে বিশেষ ধ্যান দেওয়া। কারণ বিরুদ্ধ
ভোজনের ফলে নপুংসকতা, অন্ধ্বত্ব, কানে কম শোনা, রক্তচাপ, উন্মাদনা, হৃদরোগ, পেটের
রোগ, অর্শ, শারীরিক বিবর্ণতা অম্ল-পিত্ত-বাতের রোগ হয়ে থাকে। পাঠকদের হিতার্থে বেশ
কয়েকটি আহারীয় দ্রব্যের ক্ষতিকারক ও লাভদায়ক সংযোগ উল্লেখ করা হলো:-
প্রথমে ক্ষতিকারক
সংযোগ:
০১)প্রাত:কালে
খালিপেটে টকজাতীয় দ্রব্য, কলা, কালো জাম, কুল, গুলোর, তেঁতুল, আদা, আঙ্কোল,
চিরঞ্জৌ, নারকেল ও তিল দিয়ে তৈরী কোন বস্তু খাওয়া ঠিক নয় তাতে স্বাস্থ্য নষ্ট হয়।
০২)দুধের সাথে
নুন, গুড়, তিল, যবের ছাতু, মধু, কলা, বেল, কৈথ, কূল, নারকেল, আখরোট, মূলো, সবুজ সব্জি, চাক, সজনে, কুলথী, কলাই,
মুঠ, সীম, তেঁতুল, মদ ও টক জাতীয় কোন দ্রব্য খাওয়া উচিত নয় তাতে পেটে বিষক্রিয়ার
সৃষ্টি হয়, পাকস্থলীর কার্য্যক্ষমতা হ্রাস পায় গ্যসের সৃষ্টি হয় এবং ক্রিমির
উপদ্রব বৃদ্ধি পায়।
০৩)ঘৃত ও মধু
কখনই সমান মাত্রায় মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয়, এ সংযোগ মহা বিষময় হয়ে থাকে, তবে সমান
মাত্রায় তাতে দধি মিশিযে খাওয়া যেতে পারে।
০৪)পায়েসের সাথে
খিচুড়ি এবং ছাতুর সেবন করা উচিত নয় তাতে পেটের গণ্ডগোল হয়ে থাকে।
০৫)ভাতের সাথে
ভিনিগারের সেবন করা উচিত নয়, এমনিতেই ভিনিগার কোন কিছুতে মিশাতে হলে খুবই অল্প
মাত্রায় মিশেতে হয়।
০৬)মূলোর সাথে
মাখন আর গুড়ের সেবন করা উচিত নয়, আর মাঘমাসে মূলো কখনই খাওয়া ঠিক নয়।
০৭)কলাইয়ের ডালের
সাথে দই আর মূলোর সেবন করা উচিত নয়।
০৮)রাত্রিকালে
মূলো, শশা, দই, মঠঠা, যবের ছাতু এবং তিল থেকে প্রস্তুত দ্রব্য গ্রহণ করা ঠিক নয়।
অবশ্য দই পানী মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
০৯)ভোজনের পরে
কলা, কাঁকড়ি, কমল নাল, মিস, শালুক, কন্দযুক্ত সব্জি যেমন- আলু, কচু, এবং আখ থেকে
প্রস্তুত দ্রব্য খাওয়া উচিত নয়। ১০)
১১)ভরা পেটে ঘি
কখনই খাওয়া উচিত নয় তাতে পেটে গ্যসের সৃস্টি হয়ে থাকে, ঘি খাওয়ার সঠিক সময় হলো
সকাল বেলা সূর্য্যদয়ের তিন থেকে চার ঘন্টার মধ্যে সেবন করা।
১২)দইয়ের সাথে
দুধ, পায়েস, পনীর, কলা, মূলো, ফুটি, বেল এবং গরম ভোজন করা উচিত নয়, তাতে হজমের
সমস্যা সৃষ্টি হয়।
১৩)শরবতের সাথে
তিল তেল দিয়ে তৈরী ভোজ্য পদার্থ এবং লুচি, মালফা, বড়ার সেবন উচিত নয়।
১৪)পোই শাক
সর্ষের তেলে রান্না করে খাওয়া ঠিক নয়, তাতে অতিসার রোগের সৃষ্টি হয়।
১৫)শরৎ, গ্রীষ্ম ও বসন্ত
ঋতুতে দইয়ের সেবন করা উচিত নয়।
১৬)গরমে তপ্ত হয়ে
দুধ পান করা উচিত নয়, তাতে রক্ত বিকার হয়।
১৭)শরীর ক্লান্ত
হয়ে আসার পর ভোজন করলে বমি ও গুল্ম রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১৮)খুব বেশী কথা
বলা বা ভাষণের ফলে উৎপন্ন হওয়া ক্লান্তিতে পীড়িত হয়ে ভোজন করলে স্বরভেদ রোগের
সৃষ্টি হয়।
১৯)যে কোন খাবারই
ঠাণ্ডা ও গরম একসাতে নেওয়াটা টিক নয়, তাতে হজমের সমস্যা হয় ও গ্যাস সৃষ্টি করে
থাকে।
২০)তিলের বড়া বা পিঠের
সাথে মাছ বা মাংস জাতীয় কোন আমিষ দ্রব্য কখনই খাওয়া উচিত নয়।
আহার্য্য
দ্রব্যের লাভদায়ক সংযোগ:
১)আম ও খেজুরের
সাথে দুধের সেবন দারুণ উপকারী ও পুষ্টি এবং বলপ্রদ হয়ে থাকে।
২)ফুটির সাথে
চিনি বা দেশী চিনির শরবত সেবন।
৩)কলা খাওয়ার পর
চোট এলাচের সেবন।
৪)ভাতের সাথে
নারকেলের সেবন।
৫)মূলোর সাথে
মূলোর পাতা আর ডাটার সেবন পেটের জন্য খুবই ভালো।
৬)গাজরের সাতে
মেথী শাকের সেবন।
৭)মক্কার সাথে
মঠ্ঠার সেবন।
৮)তেঁতুলের সাথে
গুড়ের সেবন।
৯)পেয়ারা খাওয়ার
পর মৌরীর সেবন।
১০)ভাত খাওয়ার পর
বেদানার সেবন।
১১)দই এর সাথে
মুগ ডালের ঝুস, ঘি আর চিনি, মধু বা আমলা চূর্ণ মিশিয়ে সেবন ভগ্ন স্বাস্থ্যের জন্য
রামবাণ টোটকা হয়ে থাকে।
বিশেষ: রোদ ও
আগুনে তপ্ত হয়ে এসে কখনই সঙ্গে সঙ্গে জল দিয়ে স্নান করবেন না, তাতে ত্বকের রোগ,
চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে আসা এবং পিপাসার আধিক্যতা হয়। ভাত খাওয়ার পর প্রত্যহ চোখে
জলের ঝাপটা দিন তাতে চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং চোখের অনেক রোগও দূর হবে।
0 टिप्पणियाँ